ম্যাজিক লণ্ঠন ডেস্ক
প্রকাশিত ১২ মে ২০২৪ ১২:০০ মিনিট
অন্যকে জানাতে পারেন:
রাসুলভ’কে চাবুকাঘাত এবং চলচ্চিত্র নিয়ে পানাহিদের নিরন্তর সংগ্রাম
ম্যাজিক লণ্ঠন ডেস্ক
ইসলামি বিপ্লবোত্তর ইরান সরকার নিজেদের ‘উদার-মানবিক পরিচয়’ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে সিনেমার উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলো। শুরুতে তা ইরানি সিনেমাকে নতুন পথই দেখাচ্ছিলো, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু খুব বেশি দিন সেই পথে আলো জ্বলেনি। সিনেমার আধেয় স্বার্থের প্রতিকূলে গেলেই সরকারি রোষানলে পড়তে হয়েছে সিনেমা-সংশ্লিষ্টদের। নির্মাতাদের নজরদারি, গ্রেপ্তার, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি নিষিদ্ধ করা হয়েছে সিনেমা।
সম্প্রতি দেশটির প্রখ্যাত নির্মাতা মোহাম্মদ রাসুলভকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ইরানের আদালত। একই সঙ্গে তাকে চাবুক মারা এবং তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, তার কর্মকাণ্ড দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ৮ মে রাসুলভের আইনজীবী বাবাক পাকনিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
অবশ্য ইরানে এই ঘটনা নতুন নয়। রাসুলভ দীর্ঘদিন যার সহকারী থেকে সিনেমা বানানো শিখেছেন, তিনি ইরানের নতুন ধারার সিনেমার অত্যন্ত প্রভাবশালী নির্মাতা জাফর পানাহি। ৯০ দশক থেকে যার নির্মিত প্রতিটি সিনেমায় ইরান সরকারের দুর্নীতি, অগণিত সমস্যা ও বাস্তবতা, নারী অধিকার ক্ষুণ্ন, নীতিপুলিশের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড তথা সমাজের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি উঠে এসেছে। তাই সরকার ও পানাহির মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিলো শুরু থেকেই। ফলস্বরূপ তার শেষ তিনটি সিনেমা ‘দ্য সার্কেল’, ‘ক্রিমসন গোল্ড’ ও ‘অফসাইড’ নিজ ভূমিতেই নিষিদ্ধ হয়।
এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন সময়ে ইরান সরকারের নানা নিয়ম নিয়ে কথা বলার কারণে ২০১০ সালের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত পানাহিকে কারাগারে থাকতে হয়। কারাগারে অনশন করে পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। একই বছর ইরান সরকার দেশের জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে অপরাধ করার অভিসন্ধি নিয়ে সমাবেশ ও ষড়যন্ত্রে যুক্ত হওয়াসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে অভিযোগ তোলে পানাহির বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর পানাহির বিরুদ্ধে ছয় বছর কারাদন্ডের রায় দেন আদালত। একই সঙ্গে ২০ বছর সিনেমা নির্মাণ, চিত্রনাট্য লেখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। জাফর পানাহির সঙ্গে একই সাজা হয় তার অন্যতম শিষ্য রাসুলভেরও।
সর্বশেষ ২০২২ সালের মে মাসে ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের আবাদন শহরে একটি ভবন ধসে ৪১ জন মারা যাওয়ার ঘটনাকে ঘিরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এই ঘটনায় সাধারণ মানুষ সরকারের উদ্দেশ্যে 'পুট ইয়োর গান ডাউন' হ্যাশ ট্যাগ ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হয়। যে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন রাসুলভ ও মোস্তফা আল আহমেদ নামে আরেক নির্মাতা।
নির্মাতা জাফর পানাহি
এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ইরান সরকার দাবি করে, পুলিশের সঙ্গে চলমান আন্দোলনে তারা ঘি ঢেলেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে অনেকের মতো তাদেরও গ্রেপ্তার হতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ‘অ্যা ম্যান অব ইন্ট্রিগ্রিটি’(২০১৭) সিনেমার জন্য রাসুলভকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই সিনেমাটিতে ইরানের দুর্নীতি ও অবিচারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। কিন্তু রাসুলভ গ্রেপ্তারের পর ইরানে বিক্ষোভ শুরু হলে সরকার সে বছরের সেপ্টেম্বরে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তবে জুলাইয়ে রাসুলভের বিষয়ে প্রসিকিউটরের অফিসে খোঁজখবর নেওয়া এবং তার মুক্তি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন ৬৩ বছর বয়সী জাফর পানাহি। আলোচিত এভিন কারাগারে ৭ মাস বন্দি থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামিনে মুক্তি পান পানাহি।
বর্তমানে ৫০ বছর বয়সী রাসুলভকে ইরানের এ সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতা মনে করা হয়। তার নতুন সিনেমা ‘দ্য সিড অব দ্য স্যাক্রেড ফিগ’এবারের কান উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে।
গত ৩০ এপ্রিল আইনজীবী পাকনিয়া বলেছিলেন, ‘দ্য সিড অব দ্য স্যাক্রেড ফিগ’সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন পাঠায় ইরানি কর্তৃপক্ষ। এমনকি কান উৎসব থেকে সিনেমাটি প্রত্যাহার করে নিতে তাদের ওপর চাপও সৃষ্টি করা হয়। পাকনিয়া আরও জানান, গত কয়েক সপ্তাহে সিনেমার বেশ কিছু কলাকুশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং অভিনয়শিল্পীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে ঠিক কতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০২০ সালে ‘দেয়ার ইজ নো এভিল’সিনেমার জন্য বার্লিন উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণভালুক জেতেন রাসুলভ। আগামী ১৪ মে থেকে ২৫ মে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিতব্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে রাসুলফ এবার ইরান থেকে যোগ দিতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে তার আইনজীবী আগেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। আর এর মধ্যেই এধরনের একটা ঘটনা ঘটলো।
জানা গেছে, ‘দ্য সিড অব দ্য স্যাক্রেড ফিগ’সিনেমায় ইরানের বিচারব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরেছেন রাসুলভ।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন