Magic Lanthon

               

তাওকীর ইসলাম সাইক

প্রকাশিত ৩০ জুন ২০২৪ ১২:০০ মিনিট

অন্যকে জানাতে পারেন:

‘আমরা মূলত রাজশাহীতে একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্ডাস্ট্রি তৈরির চেষ্টা করছি’

তাওকীর ইসলাম সাইক


তাওকীর ইসলাম সাইক-এর জন্ম রাজশাহীতে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি। খুব ছোটোবেলা থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহী তাওকীর প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়, ২০০৯-এ। শুরুটা হয়েছিলো মূলত চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটির সদস্য হিসেবে। রাজশাহীর চলচ্চিত্রিক পরিবেশে শৈশব-কৈশোর পেরোনো তাওকীর একসময় চলচ্চিত্র নিয়ে পড়তে যান ভারতের নৈডা’র ‘এশিয়ান স্কুল অব মিডিয়া স্টাডিজ’-এ। সেখান থেকে তিনি বি এস সি করেন চলচ্চিত্রে। তার স্পেশালাইজেশন ছিলো সিনেমাটোগ্রাফি। কৈশোরে সাইকের প্রথম নির্মিত সেই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম ছিলো কঙ্কপূরাণ (২০০৯)। এর পর একে একে তিনি নির্মাণ করেন গ্যাস বেলুন (২০১০), লামা (২০১০), দ্য ইফনিট (২০১১), গোল ও যোগ (২০১২), সিনেমার নাম খুঁজছি (২০১৩), আয়না (২০১৫) ও সর্বোচ্চ গতিসীমা (২০১৯)। ২০২২ খ্রিস্টাব্দে তাওকীর ‘শাটিকাপ’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে বেশ আলোচিত হন। মূলত ঢাকার বাইরে থেকে একেবারে অপেশাদার অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী এবং নিজেদের গল্প, ভাষা ও প্রযোজনা নিয়ে হাজির হয় ‘শাটিকাপ’। এর পরে নির্মাণ করেন দ্বিতীয় ওয়েব সিরিজ ‘সিনপাট’। এই ওয়েব সিরিজেও তিনি অভিনয়শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে খানিক নব্য-বাস্তববাদ চলচ্চিত্র ধারার আশ্রয় নেন। বিশেষ করে ‘সিনপাট’-এর প্রোটাগনিস্ট ডাকাত চরিত্রে অভিনয় করা সোহেল শেখ-এর অভিনয় জগতের সঙ্গে একেবারেই কোনো সম্পর্ক ছিলো না। বরং তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। রাজশাহীতে যেদিন ‘সিনপাট’-এর প্রিমিয়ার হয় সেদিনও তিনি একটি মামলায় জামিন পান, এবং দাপ্তরিক সব কাজ শেষ করে তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে দেরি হওয়ায় তিনি সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি। সাইক বর্তমানে রাজশাহীতে তার নিজের প্রতিষ্ঠান ‘ফুটপ্রিন্ট ফিল্ম প্রোডাকশন’ এর নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

ওভার দ্য টপ (ওটিটি) নিয়ে একটি অ্যাকাডেমিক গবেষণার অংশ হিসেবে তাওকীর ইসলাম সাইকের সঙ্গে রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় তার কার্যালয়ে ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ দীর্ঘ এই আলাপচারিতায় অংশ নেয় আ-আল মামুন ও কাজী মামুন হায়দার। সেই আলাপচারিতার দ্বিতীয় পর্ব ‘ম্যাজিক লণ্ঠন’-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

 

দ্বিতীয় পর্ব.

আ-আল মামুন : ‘শাটিকাপ’-এর ট্রেলার দেখে প্রথমে কিন্তু আমাদেরও ভালো লেগেছিলো!

তাওকীর ইসলাম সাইক : ওই সময় আমরা সাহসটা পেয়ে গেলাম। আমরা প্লাটফর্মকে বললাম, একটা লেভেল পর্যন্ত আমরা নিজেরাই আগে লক করি। তার পর আপনাদের কাছে যাবো। আমরা তাই করলামও। নিজেদের মতো পুরোটা কাট রেডি করলাম; তার পর প্লাটফর্মের কাছে গেলাম। তবে প্লাটফর্মের সঙ্গে জার্নিটা সুন্দর ছিলো। যেমন, ‘চরকি’র যারা ক্রিয়েটিভ টিম, মানে যারা ওদের কনটেন্ট দেখে, তাদের ফিডব্যাক খুবই গঠনমূলক ছিলো। সিরিজটা কিনছি বলেই একটা ফিডব্যাক দিতে হবে বলে দিচ্ছি, ব্যাপারটা মোটেও এ রকম ছিলো না। ওরা খুবই প্রফেশনাল এবং কো-অপারেটিভ ছিলো। এভাবেই আমাদের জার্নিটা হয়। ‘হইচই’ও ‘চরকি’র দুটি প্লাটফর্মের সঙ্গে আমাদের কথা চলছিলো; সবকিছু মিলিয়ে আমাদের ‘চরকি’র সঙ্গেই লক হয়।

তবে ‘চরকি’র সঙ্গে যাওয়ার আরেকটা কারণও ছিলো। ‘চরকি’ প্রমিজ করেছিলো, যা-ই হয়ে যাক, এটার সংলাপে ওরা হাত দেবে না। কোথাও বিপ বসাবে না। কোনো কারণে শেষ পর্যন্ত নামিয়ে ফেলতে হলেও ওরা এটা করতে পারবে না।

কাজী মামুন হায়দার : ‘হইচই’ কি এই ধরনের চুক্তিতে এগ্রি করেনি?

সাইক : ‘হইচই’ আমাদের বলেছিলো, ওরা কিছু সংলাপ ফেলে দিয়ে আবার নতুনভাবে ডাবিং করে সংলাপে স্ল্যাঙ কমিয়ে আনা যায় কিনা আর এর বাইরেও তারা কিছু জায়গায় বিপ ব্যবহার করতে চেয়েছিলো। কিন্তু এইভাবে প্রজেক্টটা ওয়ার্ক করছিলো না। ওই জায়গা থেকেই ফাইনালি আমাদের ‘চরকি’র সঙ্গে যাওয়া।

মামুন হায়দার : ফাইন্যান্স কি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিলো এক্ষেত্রে?

সাইক : বলতে গেলে ফাইন্যান্স খুব ছোটো ম্যাটার ছিলো; স্বাধীনতাটাই ছিলো মূল বিষয়। যদি ফাইন্যান্সের বিষয় বলি তাহলে দুইটা প্রতিষ্ঠান থেকেই আমাদেরকে কাছাকাছি অফার করা হয়েছিলো। এক্ষেত্রে আমরা যা চেয়েছি, তাতে ‘হইচই’ বলেছে, দেখেন কিছুটা কমানো যায় কিনা? ফাইনাল বাজেট সাবমিশনের আগে ‘চরকি’ থেকে আমাদেরকে ফোন করে বলেছিলো, আপনারা চাইলে বাজেটটা একটু বাড়াতে পারেন। কারণ পরে নিগোশিয়েশন হতে পারে। সবমিলিয়ে এই জার্নিটা খুব সুন্দর ছিলো!

মামুন হায়দার : ধরেন, আপনি একেবারে ইয়াং একটা ছেলে; রাজশাহী থেকে এসেছেন; আগে এ ধরনের কাজ করেননি; এই প্রতিবন্ধকতাগুলো কি ফেইস করতে হয়েছে?

সাইক : আমরা তো আসলে পুরো প্রজেক্ট-ই রেডি করে নিয়ে গিয়েছিলাম।

মামুন হায়দার : তার মানে তারা আগেই ভিজ্যুয়ালি বিষয়টা দেখতে পেরেছে।

সাইক : হ্যাঁ। ফলে আমরা এটা পারবো কিনা, সে প্রশ্নই ওঠেনি।

মামুন হায়দার : এই বিজনেসের সঙ্গে যারা জড়িত, মানে প্রোডাকশন হাউজ, সাউন্ড বা অন্যান্যরা কি আপনাকে চিনতো যে, রাজশাহী থেকে একটা ছেলে এসেছে, এই রকম কাজ নিয়ে?

সাইক : ‘শাটিকাপ’-এর আগে যেহেতু ছোট্ট একটা সিনেমা যাত্রা ছিলো সেই সুবাদে কিছু মানুষ আমাকে চিনতো। ‘শাটিকাপ’ নিয়ে যাওয়ার পর মূলত ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে একটা সখ্য বাড়ে।

মামুন হায়দার : তার মানে মফস্বল থেকে গেলেও তখন আর এটা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে থাকেনি। অর্থাৎ এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নির্মাতার মেধা।

সাইক : হ্যাঁ, রাজশাহীর মতো একটা জায়গা থেকে কাজটা নিয়ে যাওয়াই বরং মূল উৎসাহের জায়গায় পরিণত হয়। এবং এরপর থেকে এখন পর্যন্ত যাদের সঙ্গে আমরা মিট করি তাদের আলাপে রাজশাহী একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আমাদের মনে হয়।

মামুন হায়দার : তাহলে প্রশ্নটা মেধার-ও নয়এই মানগুলো একটি আদর্শিক কোয়েশ্চেনবরং ব্যবসার প্রশ্নটি ভাবতে হবে। ওরা কনটেন্ট দেখেছেআই নিড অ্যা বিজনেস। আই নিড অ্যা ব্লাস্ট। মেধা কার আছে, না আছে ওইগুলো ম্যাটার করে নাফলে তখন তো মেধাবীকেই কাজ দিতে হচ্ছে। অন্য কাউকে দিলে তো তারা এটা পারবে না। মেধার মূল্যায়ন বলতে ব্যবসাটাও বুঝতে হবে। এটা তাহলে ভাইস-ভারসা আরকি।

সাইক : মানে কিছু জিনিসকে তাদের বিবেচনায় নিতেই হয়। যেমন ধরেন, এটা (কনটেন্ট) যদি আর্ট ঘরানার কোনো কিছু হতো, যেটা আসলে ম্যাস পিপলকে কানেক্ট করবে কি না? আবার কেবল ক্রিটিকদের-ই কানেক্ট করবে কি না? সবমিলিয়ে একটা ব্যাপার হলো যে, তাহলে আমরা ছবিটা আমাদের ওটিটির লাইব্রেরিতে রাখবো কি না। লাইব্রেরিতে রাখলে কতো পার্সেন্ট অডিয়েন্স আছে যারা এটা দেখবে।

আল মামুন : এটা কিন্তু ‘চরকি’র জন্য একটা বুস্টও। কারণ ‘চরকি’ প্লাটফর্ম হিসেবে বাংলাদেশে যাত্রা করছে বাংলাদেশের কনটেন্ট নিয়ে, যেটা রাজশাহীর মতো মফস্বলের একটা ছেলে নির্মাণ করেছে।

সাইক : সিরিজটাতে তো তথাকথিত কোনো স্টার কাস্ট নেই। একেবারে যাদেরকে কেউ কোনোদিন দেখেনি তাদের নিয়ে করা কাজ। বলতে গেলে একদম ব্র্যান্ডলেস। তার পরও কো-প্রোডিউসিংয়ের জন্য যখন প্রোডিউসারের সঙ্গে কথা হয়, তিনিও কিন্তু বলেননি, এটার মধ্যে কেনো স্টার কাস্ট নাই। একইভাবে প্লাটফর্মও কখনো এই কথাটি বলেনি যে, এটার মধ্যে তো আসলে ওই অর্থে প্রচলিত কোনো মুখ নাই, তাহলে আমরা কীসের বেসিসে কী করবো!

আসলে মিডিয়া হিসেবে টেলিভিশন পর্যন্ত স্টার কাস্টের এই ক্রাইসিসটা ছিলো। টেলিভিশন মিডিয়াতে কিছু প্রমিনেন্ট ফেইস না থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রজেক্টটা দর্শক সমাদৃত হয় না। তবে ওটিটি পুরো পৃথিবীর অডিয়েন্সের জন্য হওয়ায় সবক্ষেত্রে প্রমিনেন্ট ফেইস ম্যাটার করে না। গল্পও কনটেন্টের নায়ক হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আল মামুন : ইন্ডাস্ট্রির যে অবস্থা তাতে এখানে একটা বিষয় বোধহয় গুরুত্বপূর্ণ, ইন্ডাস্ট্রি যে টাইপ ফেইস তৈরি করে দিয়েছেউত্তম কুমার, অমিতাভ, শাহরুখএই ভঙ্গিতে শাহরুখ কথা বলবে, সালমান এসে এ রকম করে দাঁড়াবে। গত ৮-১০ বছরে মনে হয় ওই যুগ শেষ হয়ে গেছে। ফলে ওইখানে একটা ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে এবং পটেনশিয়ালিটি, লোকালিটি, ইন্ডিভিজ্যুয়াল জায়গাটা তৈরি হয়েছে। যেমন, ইন্ডাস্ট্রিতে এন্টি-হিরো যে হিরো হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, এটা কিন্তু ৭০-এর দশকে সম্ভব হয়নি। অথচ ৮০’র শেষ দিকে এন্টি-হিরোরাই ভালো করেছে।

সাইক : আমিও আপনার কথার সঙ্গে একমত।

আল মামুন : যখন কেউ অর্গানিকভাবে কোনো গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লেখে, ইভেন পত্রিকা করে, সেটা কিন্তু দুর্দান্ত জিনিসই হয়!

সাইক : আমার মনে হয় এখানেই আর্টিস্টের নিজস্ব সিগনেচার তৈরি হয়।

আল মামুন : অবশ্যই সিগনেচার। এখানে সবাই ওয়ন করেছে। এবং সেটা দিয়ে ব্যবসা করছে।

সাইক : এই ছবির সবাই আসলে ফিল্মমেকার। কারণ আপনি যদি কস্টিউম ডিজাইনারকে জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা, এই সিনটা কী হবে? ও পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে বলতে পারবে। কারণ ও সবটাই জানে।

আল মামুন : তার মানে এখানে এটা অর্গানিক প্রসেসের মধ্যে ওরা পুরো টিমটাই ছিলো।

সাইক : আমি জানি না এই প্রজেক্টটা আসলে প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে সম্ভব হতো কিনা। কারণ পুরো সিরিজটার জার্নিতেই কাজ শিখে শিখে করার এক ধরনের ব্যাপার ছিলো। যেখান থেকে নানা ধরনের নতুন ঠিক-ভুলের সৃষ্টি হয়েছে। আর কোনো প্রফেশনালের জন্য এইভাবে একেবারে শূন্য অবস্থান থেকে অ্যাক্সপেরিমেন্ট করাটা যেমন কঠিন, ঠিক একইভাবে তার যে পারিশ্রমিক সেইটা দেওয়ার মতো সামর্থ্যও আমাদের ছিলো না।

আল মামুন : আমাদের প্রশ্ন হলো, এর পরে যখন আপনি কাজ করবেন, তখন কি ওই রকম টিম, স্পিরিট, প্যাশন থাকবে?

সাইক : আমরা ওই রকম ভাবেই কাজটা করার চেষ্টা করছি।

মামুন হায়দার : আমরা আবার একটু নির্দিষ্ট করে ‘শাটিকাপ’-এ ফিরি। ফার্স্ট ড্রাফট এডিটিংয়ের পর আপনারা ‘চরকি’র সঙ্গে আলোচনায় গেলেন। তার পর কী হলো?

সাইক : শ্যুট শেষ হওয়ার পর পরই ‘চরকি’ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলো। তবে আমরা প্রথম ড্রাফট এডিটিংয়ের পর সেটা তাদের দেখাই। ওরা দেখার পর ‘চরকি’র অফিসে একটা মিটিং সেট করে। সেখানে ওদের সি ই ও রনি ভাই (রেদওয়ান রনি), আদর আপু, ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার নির্ঝর ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের পুরো প্রজেক্টটা নিয়ে আলোচনা হয়। মিটিংয়ের দিন আমার সঙ্গে মনোজ প্রামাণিক-ও ছিলেন। মিটিংয়ে যেটা মনে হলো, তারা বেশ ইন্টারেস্টেড আর অবাক হয়েছিলো এইভাবে ইন্ডিপেন্ডেন্টলি একটা সিরিজ করে ফেলায়। যাইহোক, এভাবেই আমাদের আলাপের জার্নি শুরু হলো এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে ফাইনাল পোস্ট-প্রোডাকশন চলতে থাকলো। এতোদিন যেই প্রজেক্টটা আমরা আমাদের সাধ্যের সর্বোচ্চটা দিয়ে করার চেষ্টা করছিলাম ফাইনালি ‘চরকি’ও অন্যান্য পোস্ট-প্রোডাকশন স্পেশালিস্টরা অন বোর্ড হওয়ায় ফাইনাল আউটপুট আমাদের মন মতো হলো।

ফাইনালি ‘চরকি’র সঙ্গে আমাদের চুক্তি হলো, ওরা এই সিরিজটাকে এইভাবেই রিলিজ করবে। এইভাবে বলার কারণ হলো সিরিজটাতে যথেষ্ট পরিমাণ স্ল্যাঙ ও র অ্যাকশন আছে। যদি দর্শকের পক্ষ থেকে কিংবা আইনি কোনো জটিলতা তৈরি হয় তাহলে কোনো সিন সেন্সর না করে পুরো সিরিজটাই ‘চরকি’ নামিয়ে দেবে। এবং যেকোনো প্রতিকূল মুহূর্ত তৈরি হলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মানে আমরা ‘ফুটপ্রিন্ট ফিল্ম প্রোডাকশন’এবং প্লাটফর্ম হিসেবে ‘চরকি’ একসঙ্গে সেটা সমাধানের চেষ্টা করবো।

ফলে আমরা শেষ পর্যন্ত ভয়ে ছিলাম, এই রকম একটা প্রজেক্ট যেহেতু বাংলা ভাষায় বাংলাদেশে রিলিজ পায়নি, তাই এটা রিলিজ পাওয়ার পর প্রচুর নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট তৈরি হতে পারে। আমাদের দর্শক ও ক্রিটিকরা এটাকে বাজেভাবে নিতে পারে। আর তারা বাজেভাবে নেওয়া মানে, সমাজ এটার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়া। আমরা সেই জায়গাটা উতরে যাই শুরুতেই। দর্শক ও ক্রিটিকদের একটা বড়ো অংশ ‘শাটিকাপ’-এর প্রশংসা করেছে। কিছু জায়গায় যে একেবারে এর ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেনি এমনটাও নয়। আমাদের কিছু সিনিয়র ফিল্মমেকার পার্সোনালি আমাকে বলেছে, কাজের মধ্যে আমাদের রুচির পরিচয়টা থাকা উচিত।

কাজটা করতে গিয়ে আবার অনেক মজার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। একদিন কুমিল্লা বা বরিশাল থেকে এক চা দোকানি আমার নম্বর সংগ্রহ করে কল করেছিলেন। উনি আমাকে বলেন, ভাই আমি তো একটা অপরাধ করে ফেলেছি। আপনার ছবিটার ভিডিও আমি পেয়েছি। আমি দোকানে বসে বসে ওটা দেখতাম। আমার দোকানে যে ছেলেরা চা খায়, ওরাও আমার কাছে এসে দেখেছে। এভাবে পুরো গ্রাম দেখে ফেলেছে। গ্রামের একটা ছেলে বাইরে থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে হয়তো, ওই ছেলেও সেটা নিয়ে দেখেছে। পরে ওই চা দোকানিকে ছেলেটা বলেছে, তুমি তো বিপদে পড়ে যাবা, যদি ওরা জেনে যায়, তুমি পাইরেসি করেছো। তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে। সেই ভয়ে চা দোকানি আমাকে কল করে ভুল স্বীকার করে মাফ চেয়েছে। মানে বিষয়টা খুবই ইন্টারেস্টিং! এটা আমি জীবনেও ভুলবো না!

আল মামুন : ওটিটিতে এটার মেইন ভিউ আসলে কেমন ছিলো?

সাইক : আসলে ভিউয়ের বিষয়গুলো তো আমাদের জানায় না। তবে রিলিজের পর ভালো একটা সাড়া পায় যেটা সোশাল মিডিয়া থেকে শুরু করে পত্র-পত্রিকার নানা আলাপ ও রিয়েকশন থেকে বুঝি।

মামুন হায়দার : সেটা অবশ্য ঠিক।

সাইক : ইন্ডিয়া থেকেও আমরা বেশ ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি। কলকাতায় এটা খুব ভালো চলেছে। অন্যদিকে ‘ফিল্ম কম্পানিয়ন’ যখন লিখেছে, সেটাও আমাদের জন্য অনেক বড়ো ব্যাপার ছিলো। আমার দেওয়া সবচেয়ে বড়ো প্রায় চারসাড়ে চার ঘণ্টার ইন্টারভিউ তাদের সাইটে রয়েছে।

আরেকটি ভালো দিক ছিলো, আমাদের চাওয়ায় ওরা [‘চরকি’] প্রিমিয়ার করার আগ্রহ দেখিয়েছিলো। কিন্তু আমি বলেছি, এটাতে আসলে রাজশাহীর মানুষের দাবি বেশি। কারণ রাজশাহীর মানুষ যে সাপোর্টটা দিয়েছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। তখন ঢাকায় না করে তারা রাজশাহীতে প্রিমিয়ার করতে রাজি হয়। এবং রাজশাহীতে প্রিমিয়ার হওয়ায় একটা আলাদা ব্যাপার হয়েছে!

মামুন হায়দার : আসলে ওয়েব সিরিজের প্রিমিয়ার তো আগে বাংলাদেশে খুব একটা চোখে পড়েনি।

সাইক : ওরা এই প্রিমিয়ারটা করতে চেয়েছিলো মূলত ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের দেখানোর জন্য‘চরকি’এই ধরনের একটা লোকাল কনটেন্ট অ্যাকুয়ার করেছে। এবং তাদের প্রেডিকশন মতে, ঢাকায় এই প্রিমিয়ারটা হলে সেটা নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনাটা বেশি হতো। তবে আমাদের চাওয়ার কথা বিবেচনা করেই ওরা প্রিমিয়ারটা রাজশাহীতে করে।

আল মামুন : একটা আলাদা ক্যাম্পেইন স্টাইল হিসেবে কাজ করেছে।

সাইক : একদম। আমরা মানুষের সেই ইমোশনটা দেখেছি। রাজশাহীতে আমরা টিকিট মানে পাস হাতে পেয়েছিলাম প্রিমিয়ারের আগের দিন সন্ধ্যায়। পরদিন শো। আমাদের হাতে মাত্র তিন-চার ঘণ্টা সময় ছিলো পাস ডিসপাস করার। কিন্তু শোর আগে মানুষের ভিড়ে গেইটে দাঁড়ানো যাচ্ছিলো না। আমাদের ভলান্টিয়ারদের সরিয়ে গেইট ভাঙার মতো অবস্থা! যখন একটা এপিসোড দেখানো হয়েছেএখানকার সবকিছু চেনাজানা, লোকেশন চেনাজানা, মানুষগুলোকে কোথাও না কোথাও দেখেছি, পরিচিতসবাই খুব আনন্দে উত্তেজিত হয়েছে। হলের মধ্যে মানুষের যে চিৎকার-চেচামেচি, সেটা দেখে আমার মনে হয়েছে আর কিছু দরকার নাই! এইটাই ফিল্মমেকার হিসেবে আমার প্রাপ্তি, অনেক বড়ো অর্জন। এটা অসাধারণ ছিলো! এটাই আমাদেরকে একটা লেভেল পর্যন্ত নিয়ে গেছে, আমরা সবসময় যা করতে চেয়েছি, যেটা দাঁড় করাতে চেয়েছি, সেটা একটা জায়গা অবধি নিতে পেরেছি।

আল মামুন : তার মানে এই কনফিডেন্সটা ডেভেলপ করেছেশুধু একার না, পুরো টিমের—চাইলে লোকালি-ও ভালো কিছু করা যায়।

সাইক : আমাদের অ্যাক্টররা এখন বিভিন্ন ভালো প্রজেক্টে কাজ করছে। ইভেন ‘কারাগার’-এও ছিলো তিন জন। আরো কিছু প্রজেক্টে অনেকে কাজ করছে। এছাড়া বিজ্ঞাপনেও কাজ করছে। এমনকি ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকজনও বাইরে কাজ করছে। যেমন, আমাদের সাউন্ডের একজন এখন ঢাকায় কাজ করছে। বেসিকলি যে ‘শাটিকাপ’-এর সাউন্ডে রেকর্ড করেছে, তাকে এখন মোটামুটি ঢাকায় সবাই চেনে। এটাও আমাদের অনেক বড়ো পাওয়া। কারণ যে ছেলেটা সাউন্ড সেভাবে বুঝতোই না; মাত্র ছয় মাস এখানে কাজ করেছে; ওর সাউন্ড যখন স্টুডিওতে গেছে, তারাও অবাক হয়েছে!

প্রথমবার আমরা যখন স্টুডিওতে যাই ওরা [সাউন্ড ডিজাইনার, ইঞ্জিনিয়ার] ভয় পাচ্ছিলো, এরা কী না কী নিয়ে আসছে। পরে ওরা নিজেরাও অবাক হয়েছে! আর ‘শাটিকাপ’ যখন হয়েছে, তখন এইভাবে ডিটেইলস সাউন্ড, এইভাবে রেকর্ড করা সাউন্ড কোনো সিরিজে ছিলো না। আবার ‘শাটিকাপ’-এর পর যেগুলো আসছে, সেগুলোর সাউন্ড আরো ভালো। কারণ ‘শাটিকাপ’ করার সময় আমাদের ওই ধরনের সময় বা সুযোগ ছিলো না। যেমন, ‘তাকদির’, ‘বলি’ অনেক ভালো হয়েছে। আর প্রফেশনাল আর্টিস্টরা ডাবিংটাই পছন্দ করে। কারণ আমরা এখানে একটা দিলাম, আবার ডাবিংয়ে গিয়ে আরেকটা দিলাম। তখন অন্য কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। এই যে বৃষ্টি হচ্ছে, অন্য একটা সাউন্ড এসে ঢুকছে।

যাইহোক, এটাই ছিলো ‘শাটিকাপ’ নিয়ে আমাদের এক্সপেরিয়েন্স। এবং ‘শাটিকাপ’-এর এক্সপেরিয়েন্সের পর যেটা হয়েছে, ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের এই ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকিংয়ের একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। যেটা খুবই ভালো।

আল মামুন : ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকিং শব্দটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটা অর্গানিক প্রসেস। আমি একটা সেটআপ দাঁড় করাচ্ছি পরিবারের মতো এবং তারা নিজেদের মতো করে গল্প তৈরি করবে ও ভাববে।

সাইক : বেসিকলি এটাই। কেননা অলটারনেটিভ ইন্ডাস্ট্রি না দাঁড়ানো পর্যন্তধরেন আমাদের মতো যারা একেবারে নতুন মানুষ তাদের জন্য নিজের মতো করে গল্প বলাটা কী আদৌ সম্ভব ছিলো! আদৌ আমরা ‘শাটিকাপ’ না করলে কোনো প্লাটফর্ম বা অন্য প্রোডিউসার আমাদের অ্যাক্সেস দিতো? কখনোই না।

মামুন হায়দার : যদি উল্টো করে বলি, ওটিটি প্লাটফর্ম না থাকলে কী হতো?

সাইক : ওটিটি প্লাটফর্ম যদি না থাকতো তাহলে আমাদের আরো অনেকদিন পর্যন্ত স্ট্রাগল করতে হতো। আমার নিজের ধারণা, সিনেমা থিয়েটার এবং ওটিটি দুইটাই প্যারালালি রেললাইনের মতো চলে। কারণ মানুষ বাংলা নাটক, সিনেমাকে বাংলা কনটেন্ট হিসেবেই দেখে। ওটিটিতে ভালো বাংলা সিনেমা বা সিরিজ আসলে যেমন বাংলা কনটেন্ট দেখার আগ্রহ বাড়ে ঠিক একইভাবে সিনেমাহলেও ভালো বাংলা সিনেমা আসলে দেখার এক ধরনের অভ্যাস তৈরি হয়। সো, এমনটা বলা যায়, এক মাধ্যম অন্য মাধ্যমের পরিপূরক। মূলত মানুষের যদি বাংলা কনটেন্ট দেখতে ভালো লাগে, তাহলে সে দেখবেই; এটা সিনেমাহলে হচ্ছে, তাহলে এটা হলে গিয়ে দেখবো; এটা ওটিটিতে রিলিজ পেয়েছে তাহলে ওটিটিতে দেখবো বা টরেন্ট থেকে ডাউনলোড করে দেখবো। মূল বিষয় হচ্ছে, মানুষ বাংলা কনটেন্ট দেখবে।

আল মামুন : বাংলার কাহিনি দেখবো, যা আমার কথা বলে, আমি ওয়ন করতে পারি, আমি তার সঙ্গে অ্যাসোসিয়েট করতে পারি। এমনকি কলকাতার বাংলার সঙ্গেও তো আমি পরিষ্কারভাবে অ্যাসোসিয়েট করতে পারি না। বাংলাদেশের মানুষের কাছে তো কলকাতার নাটক, সিনেমা এলিয়েন আর্ট কালচার। ওইটা তো সো কলড আর্ট কালচার। যেটা আমার এভরিডে কালচার না। কলকাতা কিন্তু এখানে আমার কাছে আর্ট কালচার।

সাইক : আমার মনে হয়, ওদের গল্পটা আমাদের থেকে ভিন্ন। বেশকিছু ইন্টারেস্টিং কাজও হয়। তবে কেনো জানি মনে হয়, কলকাতার ইন্ডাস্ট্রি কিছু জায়গায় অনেকদিন ধরেই একপেশে হয়ে আছে।

আল মামুন : ওইখান থেকে রিসেন্ট শিফট করছে এবং শিফটটা ঘটাচ্ছেন আপনারা।

সাইক : রিসেন্ট টাইম ওরা (কলকাতা) কিন্তু আমাদের বেশ কয়েকটি কাজ দেখে ইন্সপায়ার্ড। এবং ওদের ওখানেও আমাদের একটা বড়ো অডিয়েন্স তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে বাংলা টিভি নাটকের। আর বর্তমানে আমাদের এখান থেকে নির্মিত কয়েকটি সিনেমা ও সিরিজও ওদের ওখানে বেশ সমাদৃত হয়েছে।

আল মামুন : হ্যাঁ, ওরা এখন ওদের ড্রয়িংরুম থেকে বের হচ্ছে।

সাইক : এগ্জ্যাক্টলি; ড্রয়িংরুমের আলাপ থেকে তারা বের হচ্ছে। এর ফলে গল্প বলার একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। যেমন, ‘মন্দার’ (ওয়েব সিরিজ) একটা নতুন গল্পের আভাস দেয়।

আল মামুন : দক্ষিণ ভারতের চাপে, হিন্দির চাপে এবং ইংরেজি প্রীতির প্রভাবে এরা নিজের কালচারটাকেই নারিশ করতে পারেনি। ওদের আদি কালচারটাই হারিয়ে গেছে। বাংলা ভাষার যে অরিজিনালিটি সেটা এখানে পাওয়া যায়, ওখানে নয়। ফলে ওইখানের ফিল্মমেকাররা খুব বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে হয় না।

সাইক : তবে গল্প বলার ক্ষেত্রে যদি তারা নিজেদের গল্প বলতে শুরু করে, তাহলে কিন্তু সেটা একটা প্যারাডাইজ হিসেবে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু সেটা অবশ্যই অথেন্টিক গল্প এবং তা বলার ধরনে নতুনত্ব থাকতে হবে। শুধু আর্ট কালচারের জায়গা থেকেই যদি ছবি বানানো হয়, তাহলে আমার মনে হয় এই মুহূর্তে নিউ ওয়েভ সিনেমায় খুব বেশি অবদান রাখার সুযোগ নেই।

মামুন হায়দার : নিউ ওয়েভ আসে মূলত প্রচলিত ধারা ভাঙতে। এই সময়ে দাঁড়িয়েএকদিকে থিয়েটারের জন্য যখন হাওয়া বা পরাণ হচ্ছে এবং সামনের দিনে আরো কয়েকটি সিনেমা আসছে; ওটিটিও ভালো জায়গায় আছে। এই রকম পরিস্থিতিতে আপনাদের কাজের প্যাটার্ন নিয়ে কী ভাবছেন?

সাইক : রাজশাহীতে বসে ইন্ডিপেন্ডন্টলি কাজ করার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে নিজের পছন্দের গল্পগুলো বলা এবং গল্পের মাধ্যমে নিজেদের ভাবাদর্শগুলো তুলে ধরা। আমাদের চলচ্চিত্র যাত্রায় আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা নানা ধরনের গল্প নতুন নতুন ট্রিটমেন্টে হাজির করেছি। আমরা আসলে আমাদের কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে কাজ করতে চাই।

দেখেন, আমাদের যে কয়েকটা জিনিস ছিলো, তার মধ্যে মূল জায়গা হলো রেভিনিউটা কীভাবে আসবে। ফাইন্যান্সটা নিয়ে আমাদের টেনশন ছিলো। সত্যিকার অর্থে প্রতিটা ফিল্মমেকার আগে ভাবে, সিনেমাটা করবোটা কীভাবে? সিনেমা বানাবো তো হল নেই, আবার বানালেও টাকা উঠবে কিনাএ রকম অনেক ক্রাইসিস ছিলো। আমি যে গল্পটা বলতে চাই, সেই গল্পটা প্রোডিউসার চায় নাএ রকম ঝামেলাও ছিলো। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, এই সমস্যাগুলো এক অর্থে সমাধান হয়েছে। এখন আমরা যে রেইঞ্জের প্রোডাকশন বানাচ্ছি, সেই রেইঞ্জটার প্রোডিউসার আছে। এমনকি যেকোনো রেইঞ্জের কাজ করলে প্রোডিউসার আছে। আমরা রিসেন্ট একটা গল্প ডেভেলপ করছি, সেই গল্পটা অন্য একটা সিরিজের। যে কোম্পানির সঙ্গে ওই গল্পটার ফার্স্ট পিচ করেছি, প্রথম পিচিংয়েই তারা প্রোডিউসার হিসেবে সাড়া দিয়েছে। এমন কিন্তু না যে, আমাদের এখন প্রোডিউসারকে হান্ট করতে হয়! মজার বিষয় হলো, প্রোডিউসাররাই এখন আমাদের খোঁজ করছে রেগুলার।

আমরা মূলত রাজশাহীতে একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্ডাস্ট্রি তৈরির চেষ্টা করছি। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই আমরা লাইন প্রোডিউসিং শুরু করছি। ঢাকা থেকে কেউ এখানে কাজ করতে চাইলে আমরা এখান থেকে লাইন প্রোডিউসিং করছি। ওনার যা যা অ্যারেঞ্জমেন্ট লাগবেখাবার কোথা থেকে আসবে, থাকবে কোথায়, ট্রান্সপোর্টেশন কী হবে—লোকালি যেটা ঢাকা থেকে সম্ভব না। লোকেশন ঠিক করা, লোকাল আর্টিস্টের জোগান—সবকিছুর যে লাইন প্রোডিউসিং যা ইন্টারন্যাশনালি হয়, ওই ধরনের চেষ্টাগুলো আমরা এখান থেকে করছি। যেনো একটা সারটেইন লেভেলে গিয়ে এটা ইন্ডাস্ট্রির রূপ নিতে পারে। ওইটাই হচ্ছে আমাদের অ্যাচিভ করার জায়গা। আমরা একদমই ইনিশিয়াল স্টেজে আছি। প্রতিবছর আমরা ওয়ার্কপ্ল্যান করে করে কাজ করতেছি।

আল মামুন : যেহেতু এখন অনলাইন প্রোজেকশন, ফলে এখানে ইন্ডাস্ট্রি কল্পনা করাটা অসম্ভব কিছু নয়।

সাইক : সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, এই প্রজেক্টটার পর আমরা ‘অ্যামাজন প্রাইম’-এর সঙ্গে মিটিং করেছি। যেখানে আমাদের সিনিয়ররা বলতেছে ‘অ্যামাজন প্রাইমে’ ঢোকা খুবই কঠিন! ভারতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে সিনেমা বানাতে চেয়েছে। তার মধ্যে গান্ডু চলচ্চিত্রখ্যাত কিউ’র (কৌশিক মুখার্জি) প্রোডাকশন হাউজ ‘অড জয়েন্ট’-এর সঙ্গে একটা প্রজেক্ট লক হয়েছে।

মামুন হায়দার : তার মানে উইন্ডো খুলে গেছে।

সাইক : হ্যাঁ, এখন আমাদের দরকার আরো স্কিলড মানুষজন।

মামুন হায়দার : আপনি কি মনে করছেন, এগুলো শুধু ওটিটিকে ঘিরে।

সাইক : না না, একদমই না। যেমন ধরেন কিউ-এর নতুন সিনেমায় আমরা কো-প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করছি। এই ছবিটা কিন্তু হলে আসবে।

এখন আসলে কনটেন্টের যে বিষয়টা দাঁড়িয়েছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমাদের রাইটিং খুবই দুর্বল। আমাদের ওভারঅল ইন্ডাস্ট্রির খাদের জায়গা হচ্ছে রাইটিং। যদি আমরা প্রত্যেকটা ছবি নিয়ে অ্যানালিসিস করি‘শাটিকাপ’ নিয়েও যদি করিআমাদের রাইটিংয়ে লুফল আছে। কিন্তু আপনি যদি ভিজ্যুয়াল দেখেন—আমরা ভিজ্যুয়ালকে প্যাট্রোনাইজ করতে পারছি, টেকনিকালি, মিউজিক, সাউন্ডকে কিন্তু প্যাট্রোনাইজ করতে পারছি। রাইটিংয়ে আমাদের এখনো গ্যাপ আছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রাইসিসের জায়গা হচ্ছে রাইটিংয়ে দক্ষ মানুষের অভাব। আমাদের স্ক্রিপ্ট রাইটার নেই।

আমাদের নিজেদেরকে স্ক্রিপ্ট লিখতে হয়। প্রফেশনাল কোনো রাইটার নেই। রিসেন্ট টাইম একটা হাব হয়েছে। তারা লিখবে এবং ১৬০০¬১৮০০ টাকা মিনিট হিসাবে। ফলে আমাদের এখন রাইটিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার জায়গা আছে। এছাড়া যে জিনিসটা আমি দেখতেছি, আমাদের ফিল্মমেকারদেরও দুইটা জায়গায় অভাব—এক, আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ খুবই দুর্বল। আমরা ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চের জন্য যেটা এখন ইনিশিয়ালি করতেছি, সেটা হচ্ছে নেক্সট ফাইভ ইয়ারস কী করবো তার পরিকল্পনা দরকার। আর দুই হলো স্ক্রিপ্ট।

আল মামুন : আমাদের ডিরেক্টর ও প্রোডিউসাররা ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ না করেই সিনেমা বানিয়ে ফেলে। কনটেন্ট পেলাম, এই অভিনয়শিল্পী আছে, এই লাগবে, ওই আছে—সিনেমা হয়ে গেলো!

সাইক : এই জায়গাটাতে আমরা যেটা করছি,  ফাইভ ইয়ারস লক করছি, আমরা কী করবো। ওইভাবে আমরা গল্প সাজিয়েছি, আমরা এখন এই গল্প নিয়ে কাজ করছি, তার পরের গল্পটা এইভাবে করবো। পরের বছর এই দুটো গল্প নিয়ে কাজ করবো। এইভাবে আমরা একটা পাঁচ বছরের প্ল্যান করছি। ধরেন, যে কাজটা হবে পাঁচ বছর পর, ওই কাজটার রিসার্চ এখনই শুরু হয়েছে।

যে গল্পটা পাঁচ বছর পর করবো, ওটা করতে অবশ্যই দুই-তিন বছর রিসার্চ দরকার। ওইটা চাইলাম আর দুই দিনে বানিয়ে ফেললাম, তাহলে ওটা ওয়ার্ক করলো না। আমরা জানি এটা পারবোও না। এভাবেই আমরা সাজাচ্ছি। এটা একটা প্রসেস।

তাওকীর ইসলাম সাইক

Touqir.footprint@gmail.com

 

আ-আল মামুন ও কাজী মামুন হায়দার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ান।

abdullahmamun@ru.ac.bd

kmhaiderru@gmail.com

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন