Magic Lanthon

               

রাজীব আহসান

প্রকাশিত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০০ মিনিট

অন্যকে জানাতে পারেন:

গদারের সঙ্গে পাঁচ দিন এবং কিছু গদারীয় পাঁচালি

রাজীব আহসান

`কাইয়্যে দ্যু সিনেমা' পত্রিকার প্রশস্ত আলোময় কক্ষটিতে চলছে তুমুল তর্কবিতর্ক। তুলাধুনা করা হচ্ছে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত হলিউড ঘরানার বস্তাপচা একটা ফরাসি সিনেমাকে। আসরের মধ্যমণি আঁদ্রে বাঁযা। তাকে ঘিরে বসে রয়েছে ফরাসি নিউ ওয়েভের পঞ্চপাণ্ডবজ্যঁ লুক গদার, ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো, এরিক রোমার, জ্যাক রিভেত ও ক্লদ শ্যাব্রল। অস্থিরতায় আচ্ছন্ন গদার মোটা ফ্রেমের চশমায় বার বার তাকাচ্ছেন তার হাতঘড়ির দিকে। ঘন হয়ে আসা আড্ডাকে মাঝপথে ফেলে হঠাৎ কক্ষ থেকে উদ্ভ্রান্তের মতো বেরিয়ে যান গদার। মরা রোদ লেগে থাকা প্যারিসের প্রায়-ফাঁকা রাস্তা পেরিয়ে উল্টো পাশে পার্ক করা ছাদ খোলা এক গাড়িতে লাফ দিয়ে উঠে পড়েন তিনি। এই গাড়িটিকেই দেখেছিলাম ব্রেথলেস সিনেমায়; ঠিক ওই গাড়িটামিশেল যেটা চুরি করেছিলো।

গাড়ি স্টার্ট দেন গোদার। দ্রুত বেগে চলতে থাকে গাড়ি। দুই-তিনটি মোড় পেরিয়ে গাড়িটি থামে অভিজাত এক হোটেলের সামনে। আগে থেকেই অপেক্ষায় থাকা ফরাসি নিউ ওয়েভের অপ্সরী আনা কারিনা’কে গাড়িতে তুলে নেন। গাড়ি ছুটে চলছে প্রচণ্ড বেগে। আনার খুব ইচ্ছে করছিলো সমুদ্র দেখতে। তাই ওরা প্যারিস ছেড়ে মার্শেই-র দিকে যাচ্ছে। ওখানে গিয়ে সমুদ্রতটে নগ্ন পায়ে হাঁটবে। আরো কতো কী! প্রবল বাতাসের ঝাপটায় উড়ছে আনার চুল; আর তা থেকে ছড়াচ্ছে ফরাসি সৌরভ। একটু পরপর পরস্পরকে চুমু খাচ্ছে আনা-গদার। ঠিক এই রকমই একটা চুমু খাওয়া মুহূর্তে হঠাৎ লরির সামনে পড়ে যায় গাড়ি।

সাইড করতে গিয়ে একটা গাছে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি খাদে পড়ে যায়। দুমড়ে-মুচড়ে যায় গদারের গাড়ি। লরির চালক ও সহযোগী খাদে নামে ওদেরকে উদ্ধার করতে। গাড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে, আর পুরো তল্লাটজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে পোড়া মবিলের গন্ধ। লরিচালক রক্তাক্ত গদার ও আনাকে উদ্ধার করতে সজোরে গাড়ির দরজায় টান দিতেই হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ি আমি। এই ভয়ানক স্বপ্নের রেশ কাটতে আমার খানিকটা সময় লেগে যায়। আমার মনে হচ্ছিলো, তখন পোড়া মবিলের ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম আমিও। স্বপ্নের ধকল কাটাতে চিলেকোঠার কক্ষটি থেকে বেরিয়ে ছাদে যাই। বেলি ফুলের গন্ধমাখা ছাদে ভোরের হিম হাওয়ায় বসে ভাবতে থাকি, গদার কী করে পাল্টে দিয়েছিলো আমার জীবন!

দুই.

আমার বয়স তখন ১৮। খুব একটা সিনেমা দেখতাম না। তখন পর্যন্ত সিনেমা দেখার দৌড় `বিটিভি'তে সম্প্রচারিত শুক্রবারের বাংলা সিনেমা এবং `মুভি অব দ্য উইক'-এ কিছু ইংরেজি সিনেমা। আর মাঝে মধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমাহলে গিয়ে দেখা হতো হিন্দি বা মাদ্রাজি সিনেমার ঢাকাইয়া বাংলা ভার্সন। কিন্তু এইসব সিনেমা আমাকে একটুও টানতো না। এর প্রধান কারণ হয়তো ওই বয়সেই পাঠক হিসেবে কিছুটা অগ্রসর থাকা। সেই সময় বাড়িতে থাকা রুশ সাহিত্য, বাংলা ক্লাসিকগুলো পড়তাম। এমনকি বন্ধু গীতিকবি নীহার আহমেদ-এর কাছ থেকে নিয়ে পড়া হতো প্রচুর সমকালীন সাহিত্য ও লিটল ম্যাগাজিন। এরই মধ্যে একদিন নীহার ভাই আমাকে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে নিয়ে গেলেন তরুণ কবিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই আজিজের কবিদের আড্ডায় আমি হয়ে পড়ি নিয়মিত সদস্য।

এভাবে আড্ডায় আড্ডায় পরিচয় হয় একদল তরুণের সঙ্গে। তারা কেউ ফিল্ম সোসাইটি করে; কেউ ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনের প্রধান পুরুষ মুহম্মদ খসরু'র শিষ্য। ওরা আমার থেকে গড়ে তিন-চার বছরের বড়ো। সারাদিন তাদের মুখে লেগে থাকতো গদার, ত্রুফো, বুনুয়েল, বার্গম্যান, ফেলিনি, কুরোসাওয়া, তারকোভস্কি প্রমুখ চলচ্চিত্রনির্মাতাদের কথা। যেহেতু আমি এদের কোনো সিনেমাই দেখিনি, তাই খুব অস্বস্তি বোধ হতো! এই ফাঁকে আমি আজিজ মার্কেট থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ক বই কিনে পড়তে শুরু করি।

একদিন বিকেলে আজিজে আড্ডা দিতে গেলাম। এক তরুণ কবি পরিচয় করে দিলেন বিখ্যাত লেখক আহমদ ছফা'র সঙ্গে। ছফা ভাই আজিজের একটা দোকানে বসেছিলেন। আমি তাকে জানাই, তার দুটি উপন্যাস `পুষ্প, বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরান' ও `গাভী বিত্তান্ত' পড়েছি। তিনি তখন মোয়া খাচ্ছিলেন এবং আমাকে একটা মোয়া খেতে দেন। আমি মোয়াটি হাতে নিয়ে দোতলায় মালেক মামার চায়ের দোকান `আড্ডা'য় যাই। মোয়া খেয়ে চা খেতে খেতে দেখি `আড্ডা'র দেয়ালে একটা পোস্টারজ্যঁ লুক গদারের রেট্রোস্পেকটিভ। আলিয়ঁস ফ্রঁসেস ধানমন্ডিতে সাত দিনে গদারের সাতটি সিনেমা দেখানো হবে। আজকেই প্রথম দিন। আজ দেখানো হবে, ব্রেথলেস

আমি আজিজ মার্কেট থেকে হাঁটতে হাঁটতে আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে যাই। ছোটো প্রজেকশন কক্ষটিতে চুপ করে বসে থাকি সিনেমা শুরুর অপেক্ষায়। এক ধরনের উত্তেজনা মনের ভেতরে কাজ করছিলো; কারণ এই প্রথম কোনো ফরাসি বা ইউরোপীয় সিনেমা দেখবো। আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের ডিরেক্টরের বক্তব্যের পর প্রজেকশন কক্ষটির বাতিগুলো নিভে যায়।  

শুরু হয় ব্রেথলেস। দারুণ একটা মিউজিক সমেত টাইটেল কার্ড যাওয়ার পর প্রথম দৃশ্যটি পর্দায় অবলোকন করি। দৃশ্যটিতে কেউ একজন পত্রিকা পড়ছে। আমরা শুধু পত্রিকার উল্টো পিঠ দেখি, যেখানে রয়েছে এক সুন্দর নারীর ছবি! আরেকজনের কণ্ঠে কিছু ফরাসি শব্দ শোনা যায়; যার সাবটাইটেল ওঠে পর্দায়After all, I'm an asshole.শুরুতেই আমি চমকে উঠি! পত্রিকাটি নামলে দেখতে পাই ব্রেথলেস-এর নায়ক মিশেলকে (জ্যঁ পল বেলমন্দো) ধূমপানরত অবস্থায়। পুরো সিনেমায় প্রায় সবসময়ই মিশেলের মুখে সিগারেট ছিলো। প্রথম প্রথম দৃশ্যের সঙ্গে চলা সাবটাইটেল পড়ে বুঝতে আমার সমস্যা হচ্ছিলো। সাবটাইটেলে চোখ রাখলে দৃশ্যটি ঠিক মতো দেখতে পারছিলাম না। কিন্তু কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আমি ইমেজের ভেতর ঢুকে যাই এবং সাবটাইটেলের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে রুদ্ধশ্বাসে সিনেমাটি দেখে শেষ করি।

আমার ভেতর এক ধরনের শিহরণ অনুভূত হয়! গদারের পাশাপাশি সিনেমার মূল অভিনয়শিল্পী জ্যঁ পল বেলমন্দো ও জাঁ সেবার্গ'কে আমার ভালো লেগে যায়। বিশেষ করে বেলমন্দোর চুরুট টানা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম! সিনেমা শেষ হওয়ার পর আলিয়ঁস ফ্রঁসেস থেকে বের হয়ে লাগোয়া ফুটপাতের দোকানে চা খাই। চা খেতে খেতে চুপ করে ফিল্ম সোসাইটির লোকজনের আলোচনা শুনি। ওখানে একজন আরেকজনকে ব্রেথলেস-এর জাম্প কাট বুঝাচ্ছিলো। আমি তখনো জানি না জাম্প কাট কী জিনিস!

পরদিন সময় মতো আবারও হাজির হই আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে। সেদিন দেখানো হচ্ছিলো অ্যা উইমেন ইজ অ্যা উইমেন (১৯৬১) সিনেমাটি। এই প্রথম আমি এক উচ্ছল, প্রেমময়, প্রাণবন্ত, স্নিগ্ধ ও লাস্যময়ী অভিনয়শিল্পীকে দেখিযার নাম আনা কারিনা। কমেডি ধাঁচের এই চলচ্চিত্রে তিনি দারুণ অভিনয় করেন। এজন্য বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীর পুরস্কারও লাভ করেন। এই সিনেমার মিউজিকও আমার খুব ভালো লেগেছিলো। সিনেমা শেষে আমাদের গন্তব্যে আবারও সেই আলিয়ঁস ফ্রঁসেস লাগোয়া ফুটপাতের চায়ের দোকান। সেখানে চা খেতে খেতে রসিয়ে রসিয়ে আলোচনা চলে গদার-আনা কারিনার প্রেম-বিয়ে-বিচ্ছেদ নিয়ে। আমি শুধু তন্ময় হয়ে তাদের কথা শুনি!

তৃতীয় দিন দেখেছিলাম অ্যা ম্যারিড উইমেন (১৯৬৪)। সিনেমার শুরুর দৃশ্যটি-ই আমার খুব ভালো লেগে যায়। একটা খালি ফ্রেমে ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ে নগ্ন এক নারীর হাত; অতঃপর ঢুকে পুরুষের এক নগ্ন হাত। শুরুর এই দৃশ্যটি দিয়েই সিনেমা শেষ হয়। সিনেমাটির মিউজিক ছিলো দারুণ আর নির্মাণশৈলীও অভিনব। আমি বোধহয় আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ছিলাম গদারের পাঠশালায়।

চতুর্থ দিন দেখলাম কনটেম্পট (১৯৬৩)। এটা মূলত সিনেমার ভেতরে সিনেমার গল্প। প্রযোজক, নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও চিত্রনাট্যকারের স্ত্রী হলো এই সিনেমার মূল চরিত্র। সিনেমাটার শুরুটাই অভিনব। একদিকে সিনেমার শুটিং হচ্ছে, অন্যদিকে পরিচয়লিপি কণ্ঠে ঘোষণা করা হচ্ছে। পরিচয়লিপির একদম শেষে গদারের গুরু আঁদ্রে বাঁযার একটি উক্তি পঠিত হয়। উক্তিটি ছিলো—‘Cinema shows a world that fits our desires.’

বাঁযার উক্তিটি শেষ হলে ক্যামেরা তাক হয় দর্শকের দিকে। এর পরের দৃশ্যেই সিনেমার প্রধান অভিনয়শিল্পী ব্রিজিত বার্দোকে সম্পূর্ণ নগ্নরূপে দেখতে পাওয়া যায়। নগ্ন ব্রিজিত অনেকটা কাঁপন ধরিয়ে দেয় আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের ছোটো হলরুমটিতে। আমাদের চোখগুলো যেনো স্থায়ীভাবে আটকে যায় পর্দায়! সিনেমার শেষ অব্দি এই রেশ অক্ষুণ্ন ছিলো। সিনেমাটি দেখে আমি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ভেতরকার নানা ঘটনা জানতে পারি। অভিজ্ঞতা লাভ করি একদম নতুন কিছু জানার এবং পাশাপাশি এও বুঝতে পারি যে, সিনেমা করা কোনো সহজ কর্ম নয়। সিনেমাটিতে নির্মাতা চরিত্রে বিখ্যাত নির্মাতা Fritz Lang অভিনয় করেন, আর সহকারী পরিচালকের ছোটো চরিত্রে ছিলেন স্বয়ং গদার।

পঞ্চম দিন দেখানো হয় পিয়ের ল্যো ফু (১৯৬৫)। প্রধান দুটি চরিত্রে জ্যঁ পল বেলমন্দো ও আনা কারিনা। সিনেমাটা প্রেম, প্রেমহীনতা ও ভায়োলেন্সে ভরপুর এক শ্বাসরুদ্ধকর জার্নি। ফার্দিনান্দ (বেলমন্দো) ও মারিয়ানের (আনা কারিনা) সঙ্গে সঙ্গে দর্শকও যেনো ঘুরছে ফ্রান্সের রাস্তা-ঘাট, নদী, শস্যক্ষেত, বনবাদাড়ে। রেট্রোস্পেকটিভে ষষ্ঠ ও সপ্তম দিন ছিলো যথাক্রমে আলফাভিল (১৯৬৫) ও মাই লাইফ টু লিভ (১৯৬২)। মামার বিয়ের কারণে আমি এই দুটো সিনেমা মিস করি। কিন্তু আমার মন পড়েছিলো গদারের কাছেই–আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের প্রজেকশন কক্ষে।

তিন.

এই পাঁচ দিনে পাল্টে গিয়েছিলো আমার জীবন। অতঃপর আমি একে একে ঢুকে পড়ি ত্রুফো, বার্গম্যান, বুনুয়েল, হিচকক, ব্রেঁসো, কঁকতো, সত্যজিৎ, কুরোসাওয়া, ফেলিনি, তারকোভস্কিসহ মাস্টার ফিল্মমেকারদের নন্দন ভুবনে। সেই থেকে সিনেমার সঙ্গেই যাপন করছি একটা জীবন। সিনেমা আমাকে হাসায়, কাঁদায়, ভাবায়, নতুন চিন্তার খোরাক জোগায়; বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। আজ যখন এতো বছর পরে সেই পাঁচ দিনের কথা ভাবি, আজো শিহরিত হই। সেই সময় অবশ্য আমি গদারের সিনেমার ভেতরের লুক্কায়িত রূপকথা, অভিনব নির্মাণশৈলী, শব্দের শৈল্পিক ব্যবহার, পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে প্রতীকায়ন, সাহিত্যে ও সঙ্গীতের অভিনব ব্যবহার বুঝতে পারিনি। কিন্তু আমার সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ মনকে দারুণভাবে তা আলোড়িত করেছিলো।

চার.

গদারের সিনেমা ও ব্যক্তিজীবন আমাকে এতোটাই মোহাচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো যে, আমি তার বায়োপিক বানানোর আকাশ-কুসুম চিন্তায় বুঁদ হয়েছিলাম কিছুদিন। গদারকে নিয়ে অনেক ইমেজ খেলা করতে থাকে আমার মস্তিষ্কে। সেই বায়োপিকের পাঁচ রকমের শুরু আমি ভেবেছিলাম

প্রথমত, গদারের মামা বাড়ির প্রশস্ত ড্রইংরুম। জানালার ফাঁক গলে কক্ষটিতে ঢুকছে কোমল আলো। মৃদু বাতাসে দুলছে জানালার সাদা পর্দা। মামা বাড়ির নিয়মিত অতিথি কবি পল ভ্যালেরি পড়ছেন নিজের লেখা কবিতা। অভ্যাগত অতিথিদের মধ্যে মায়ের কোলে বসে চার বছর বয়সি জ্যঁ লুক গদার শুনছেন সেই কবিতা। জানালার ফাঁক গলে আসা এক চিলতে রোদ গদারের গালে চিকচিক করছে।

দ্বিতীয়ত, গদারদের পারিবারিক লাইব্রেরি। বইয়ের র‌্যাকগুলোতে থরে থরে সাজানো রয়েছে বই। একাকী, নিঃসঙ্গ ১৪ বছর বয়সি গদার চুপিচুপি জানালার পাশে বসে পড়ছেন আঁদ্রে জিদ কিংবা আঁদ্রে মালরো’র কোনো বই।

তৃতীয়ত, ‘সিনেমাথেক' ফ্রান্সের গুমোট প্রোজেকশন কক্ষ। কিউরেটর অঁরি লাংলোয়ার সঙ্গে বন্ধুদের নিয়ে প্রিয় নির্মাতা হিচককের দ্য বার্ডস (১৯৬৩) দেখছেন গদার। গদারের মুখাবয়বে ফুটে উঠেছে অস্থিরতার ছাপ।

চতুর্থত, দ্য লিটল সোলজার (১৯৬৩) সিনেমার সেট। আনা কারিনাকে দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে গদার। দৃশ্যটি বার বার এন জি হচ্ছে, এবং রি-টেক করতে হচ্ছে। এ যেনো ইচ্ছাকৃতগদার-কারিনার খুঁনসুটি।

পঞ্চমত, গাদারের সুইজারল্যান্ডের বাড়ি। আল্পস পর্বত দিয়ে ঘেরা। লেকের ধারের দোতলা বাড়ির বারান্দায় বসে চুরুট টানতে টানতে রোদ পোহাচ্ছেন বৃদ্ধ গদার। কিছুক্ষণ পরই বারান্দায় হাজির হন গদারের শেষ জীবনের সঙ্গী, প্রিয়তম স্ত্রী, নির্মাতা অ্যান ম্যারি মিয়েভিল। মিয়েভিল বসেন গদারের পাশে। মিয়েভিলকে গদার বলতে শুরু করেন তার নতুন সিনেমার ভাবনা।

পাঁচ.

গদারকে নিয়ে আমার এইসব বিচ্ছিন্ন ভাবনা চলতেই থাকবে। কারণ গদার আমার/আমাদের সময়ের অন্যতম নায়ক। তাকে না ভালোবেসে পারা যায় না। আর তিনি ভালোবেসেছিলেন শুধু সিনেমাকেই; তাছাড়া আনা কারিনার মতো অপ্সরী নতুন বউকে সিগারেট আনার কথা বলে কেউ উধাও হয়ে যেতে পারে! পরে জানা গেলো,তিনি প্যারিস থেকে স্টকহোমে গিয়েছিলেন বার্গম্যানের কাছে, তার নতুন সিনেমার আইডিয়া শোনাতে।

বিদায় মায়েস্ত্রো!


লেখক : রাজীব আহসান, চলচ্চিত্রনির্মাতা।

razibaahsan@gmail.com


এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন